শিরোনামঃ
অমিতাভের ছোটবেলাটা খুবই অর্থকষ্টে কেটেছে মুক্তবাংলার মাটিতে প্রথম জনসভা যশোরে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল পাবে সোয়া ৫ লাখ শিশু আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নেয় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিরা : খন্দকার আল মঈন দৃষ্টিনন্দন স্ট্রিট আর্ট ও নকশায় পোস্টার লাগালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে : মেয়র আতিক ভবিষ্যত সরকারি সেবা আরো সহজ করবে ৩৩৩ স্মার্টসাথী বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ১৮ ডিসেম্বর বিজয় র‌্যালি করবে নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলের বৈধতা নিয়ে দায়ের করা রিট খারিজ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দ্বিতীয় দিনের আপিল শুনানিতে ৫১ জন তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেলেন আমার ক্যারিয়ারে মনে হয় এতো বড় ক্যানভাসে কোন কাজ আমি করিনি:চঞ্চল চৌধুরী বিএনপি সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী : তথ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার-ব্যাক্তিগত দ্বন্দের কারনে গার্মেন্ট সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে :ওবায়দুল কাদের জাতীয় নির্বাচনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা আনসার আহমেদ উল্লাহ বাংলাদেশে যা কিছু অর্জন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে : আমির হোসেন আমু বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিবেশবান্ধব উপায়ে মডেল ওয়ার্কশপ উন্নয়ন কাজী নজরুল ইসলামের‘কারার ওই লৌহ কপাট’ বিকৃত, এ আর রহমানের বিচার দাবি বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক সেমিনারে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট সদস্য থমাস জেডিহস্কি: বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিজয়ী হবে যুক্তরাষ্ট্র চিকুনগুনিয়ার টিকার অনুমোদন দিল
মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:১১ পূর্বাহ্ন
নোটিশঃ

মোবারক*** ***ঈদ মোবারক*** ***ঈদ মোবারক***

বিশ্বাস, জানা-অজানা

Reporter Name / ৬২ Time View
Update : বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

প্রশান্ত দাস কথা : সিংহভাগ হিন্দুদের বিশ্বাস, আচার ও পূজা অর্চনাকে বাদ দিয়ে হিন্দু সভ্যতা বা ধর্ম সম্ভব নয়। কারণ লৌকিক দেব-দেবী ও লৌকিক সংস্কৃতি সাধারণ হিন্দুর প্রাণের ধন। বলা যায় হিন্দু সভ্যতার প্রধান ধারা ও অন্যতম প্রধান ভিত্তি। আমরা জানি ঈশ্বরএক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো আকার নেই।তিনি নিরাকার। তবে তাঁর ক্ষমতা সীমাহীন। তিনি সর্বশক্তিমান। তাই তিনি তাঁর ইচ্ছা অনুসারে যে-কোনো রূপ ধারণ করতে পারেন। তাঁর যে কোনো গুণ বা শক্তিকেও তিনি আকার দিতে পারেন।ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শক্তি যখন আকার পায়,তখন তাকে দেবতা বা দেব-দেবী বলা হয়। ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট জীবের কল্যাণে বা তাঁর কোনো উদ্দেশ্য
সাধনের জন্য নিজের কোনো গুণ বা শক্তিকে বিশেষ আকার বা রূপে প্রকাশ করেন। যেমন ব্রহ্মা, বিষ্ণু,শিব, দুর্গা, লক্ষী, সরস্বতী প্রভৃতি দেব-দেবী। ঈশ্বর যে-রূপে সৃষ্টি করেন, তাঁর নাম ব্রহ্মা । তিনি যে-রূপে সৃষ্টিকে পালন করেন তাঁর নাম বিষ্ণু। তাঁর শক্তির রূপ হচ্ছেন দেবী দুর্গা। ঈশ্বর যে-রূপে বিদ্যা দান করেন, তাঁর নাম দেবী সরস্বতী ইত্যাদি। দেব-দেবীর প্রীতির জন্য ভক্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দেব-দেবীদের সন্তুষ্টীর জন্য বিশেষ গুণ বা শক্তি প্রার্থনাও করা হয়। যেমন বিদ্যার জন্য দেবী সরস্বতীর কাছে প্রার্থনা জানানো হয়। দেবী-দেবীদের সন্তুষ্ট করার জন্য যে প্রক্রিয়া ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত আছে, তার নাম যজ্ঞ ও পূজা। যজ্ঞ বা পূজা
করলে দেব-দেবীরা সন্তুষ্ট হন। ভক্ত তাঁদের কৃপা লাভ করে। সুখ ও শান্তি পান। আর দেব-দেবীর পূজা করলে ঈশ্বরও
সন্তুষ্ট হন। দেব-দেবীর প্রকারভেদ ধর্মগ্রন্থ বেদ ও পুরাণে দেব-দেবীর উল্লেখ আছে, বর্ণনা আছে। আবার কিছু দেব-
দেবী আছেন বেদ ও পুরাণে তাঁদের উল্লেখ নেই। এভাবে প্রধানত তিন প্রকার দেব-দেবীর পরিচয় পাওয়া যায়। ০১.
বৈদিক দেব-দেবী ০২. পৌরাণিক দেব-দেবী ০৩. লৌকিক দেব-দেবী।
০১. বৈদিক দেব-দেবী ঃ বেদে যে সকল দেব-দেবীর বর্ণনা করা হয়েছে, তাঁরা হলেন বৈদিক দেব-দেবী। যেমন
অগ্নি, ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, ঊষা, যম প্রভৃতি। বৈদিক যুগে দেব-দেবীদের প্রতিমা বা বিগ্রহ ছিল না। বৈদিক যুগে ঋষিরা
দেব-দেবীর রূপ, গুণ ও প্রভা ভাবাবেগে দর্শন করেছেন এবং মাধ্যম রূপে মন্ত্রের মধ্য দিয়ে তা প্রকাশ করেছেন।
০২. পৌরাণিক দেব- দেবী ঃ পুরাণসমূহ ধর্মগ্রন্থ। পুরাণসমূহে যে সকল দেব-দেবীর বর্ণনা করা হয়েছে, তাঁরা পৌরাণিক
দেব-দেবী। কয়েকজন বৈদিক দেব-দেবীসহ আরও কিছু দেব-দেবীর বর্ণনা পুরাণসমূহে পাওয়া যায়। সেই বর্ণনা
অনুসারে সে-সকল দেব-দেবীর প্র্রতমা বা বিগ্রহ নির্মাণ করে তাঁদের পূজা করার বিধি-বিধানও রচিত হয়েছে। যেমন
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, দুর্গা, কালী, লক্ষী, সরস্বতী,কার্ত্তিক, গণেশ প্রভৃতি।
০৩. লৌকিক দেব-দেবী ঃ এমন কিছু দেব-দেবী রয়েছেন, যাঁদের বর্ণনা বেদ ও পুরাণে নেই। এঁদেরকে বলা হয়
লৌকিক দেব-দেবী । যেমন মনসা, শীতলা, দক্ষিণ বায়, সুমতি, সুবচনী, নাটাইচন্ডী, পাটাইচন্ডী প্রভৃতি। অবশ্য
এঁদের মধ্যে কিছু দেব-দেবী পুরাণেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বৈদিক দেব-দেবী : অগ্নি ও ঊষা।
হিন্দু ‘বহুর মধ্যে এক, একের মধ্যে বহুর’ অনুসন্ধান করে। তাই সে অঞ্চল ও স্থান ভেদে নিজের প্রয়োজন মত অসংখ্য
লৌকিক দেব-দেবীর সন্ধান করে নিয়েছে। এই কারণে হিন্দুর কত সংখ্যক লোকায়ত দেব-দেবীর আছে তার সংখ্যা
নিরূপণ করা কষ্টসাধ্য। এ প্রসঙ্গে মোটামুটি একটি ধারণা জন্য গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসুর একটি বইয়ের কথা না বললেই
নয়। বসু তাঁর গ্রন্থে (বাংলার লৌকিক দেবতা: দে’জ পাবলিশিং : কলকাতা : ১৯৯৬) সর্বমোট পঁয়ত্রিশটি লৌকিক
দেব-দেবীর একটি পরিচয় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। এই পঁয়ত্রিশটি দেব-দেবীর হচ্ছে:
লৌকিক দেব-দেবী : মাকাল ঠাকুর, পাঁচু ঠাকুর, জ্বরাসুর, ভৈরব, রাজভলবী, করমরাজা, বনবিবি, ঢেলাই চন্ডী, সিনি দেবী,
আটেশ্বর, নারায়ণী, দক্ষিণ রায়, কালু রায়,হাড়িঝি, ভাদু, মুন্ডুমূর্তি, ওলাই চন্ডী,সাতবোন, মানিক পীর, পীরগোরাচাঁদ,ক্ষেত্রপাল, বাবা ঠাকুর, বসন্ত রায়, ঘাঁটু দেবতা, বড়খাঁ গাজী, দেবী উত্তরবাহিনী, ওলা বিবি, বাসালী, ইঁদ পূজা, ধর্ম ঠাকুর, যোগাদ্ধা,
রংকিনী, সত্যনারায়ণ/সত্যপীর, বড়াম, টুসু। স্থান ও অঞ্চল ভেদে এই পঁয়ত্রিশটি লোকায়ত দেব-দেবী বাদেও হিন্দুদের আরও অনেক লোকায়ত দেব-দেবী আছে। এঁরা বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে সাধারণ হিন্দুদের দ্বারা পূজিত হন। দেব-দেবীগণ যে নামেই পূজিত হোন না কেন এসব পূজার কেন্দ্রবিন্দুতে কাজ করে বংশ পরম্পরাগত কতগুলো বিশ্বাস। হিন্দুদের পূর্বপুরুষগণ পরলোকে বিশ্বাসী ও মৃতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তারা যাদু বিদ্যায় যেমন বিশ্বাসী ছিলেন, তেমনি বিশ্বাসী ছিলেন সৃজন শক্তিতে। সৃজনশক্তিকে তারা মাতৃজ্ঞানে পূজা করতেন। লাঙ্গলের প্রতীক হিসেবে লিঙ্গ পূজা এই সৃজনশক্তির একটি
উদাহরণ। তারা কুমারী পূজায় বিশ্বাসী ছিলেন। এসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সাথে হিন্দু তার খাদ্য রীতি, পোষাক
রীতি, ব্যবহার রীতি, জ্যোতিষীচর্চা ও ব্রতাচার ইত্যাদিকেও মিলিয়ে নিয়েছে, সামঞ্জস্যপূর্ণ করে নিয়েছে। এবারে দেখা যাক গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসু যে পয়ত্রিশটি দেব-দেবীর পরিচয় দিয়েছেন তাঁদের বৈশিষ্ট্য গুলো কী? প্রথমত দেখা যায় এই দেব-
দেবীগণের মধ্যে কেউ কেউ সাধারণভাবে সকল হিন্দু কর্তৃক পূজিত। আবার কেউ কেউ পূজিত হন বিশেষ বিশেষ বৃত্তি ও পেশাজীবীদের দ্বারা ( যেমন মৎস্যজীবীদের পূজ্য মাকাল ঠাকুর)। কেউ পূজিত হন শুধু মেয়েদের দ্বারা (ভাদু ও
টুসু দেবী)। কেউ কেউ শুধু উপজাতিদের দ্বারা (ভৈরব)। আবার কেউ কেউ পূজিত হন হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী দ্বারা (ওলাই চন্ডী, বড় খাঁগাজী, পীর গোরা চাঁদ ও সত্যনারায়ণ/সত্যপীর)।
দ্বিতীয়ত এঁদের কারও কারও প্রতিমা আছে, কারও কারও প্রতিমা নেই (মাকাল ঠাকুর, বন বিবি, হাড়িঝি ও করম
রাজা)। কোনো কোনো দেব- দেবীর প্রতিমার রূপ উগ্র(পাঁচু ঠাকুর), আবার কোনো কোনো দেব-দেবীর প্রতিমা
সৌম্য, শান্ত ও সুশ্রী। আবার কোনো কোনো দেব-দেবীর প্রতীক বৃক্ষ, প্রস্তর খন্ড অথবা মাটির স্তুপ। তৃতীয়ত এঁরা
পূজিত হন পূজারীর বিভিন্ন ইচ্ছাপূরণের জন্য। ইচ্ছাগুলোর মধ্যে আছে : অধিক মৎস্য পাওয়ার বাসনা, বনে মৃত্যুর
হাত থেকে বাঁচা, বাঘের থেকে আত্মরক্ষা, শিশুদের মঙ্গল, রোগ থেকে মুক্তি, গ্রামরক্ষা, পশুদের রোগমুক্তি, চর্মরোগ
থেকে মুক্তি, কলেরা রোগ থেকে মুক্তি ও সম্মান লাভের ইচ্ছা ইত্যাদি। চতুর্থত এই সব দেব-দেবীর পূজায় অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই কোনো ব্রাহ্মণ পুরোহিত নিয়োজিত হয় না। সাধারণ হিন্দু যার যার মত করে মন্ত্রবিহীন এই পূজাগুলো করেন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অব্রাহ্মণ পুরোহিতরাই এদের পূজা করেন। পঞ্চমত এই দেব-দেবীগণের মধ্যে বেশ কয়েকজন
মিলিত বা যুক্ত সাধনার দেব-দেবীর অর্থাৎ তারা বিভিন্ন ধর্মের লোক দ্বারা পূজিত হন। গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসুর বইয়ের আলোচনা বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টত বোঝা যায় লোকায়ত দেব-দেবীগণ অনাদিকাল থেকেই পূজিত হয়ে আসছেন। মাঝখানে আর্যদের
উত্থানের সময় এরা পেছনে পড়ে গিয়েছিলেন। কারণ আর্যরা প্রতিমা পূজায় বিশ্বাস করত না। দ্বিতীয়ত তাদের নিজস্ব দেবতা  তৃতীয়ত তারা এই পূজা-অর্চনাকে অবজ্ঞার চোখে দেখত।
আর্য-ব্রাাহ্মণ্য সমাজ তখন দু’দিক থেকে বিপদের সম্মুখীন হয়। এদের মধ্যে ছিল স্থানীয় ভূমিপুত্রগণ যারা আর্য সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক। দ্বিতীয়ত ছিল  শাসকশ্রেনী  যারা আর্যদের মতই
প্রতিমা পূজায় বিশ্বাস করে না। এই প্রেক্ষাপটে যখন প্রবল গতিতে লোকায়ত দেব-দেবীগণ সামনে আসতে থাকেন তখন ব্রাহ্মণ্য সমাজ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় তারা লোকায়ত দেব-দেবীকে গ্রহণ করার জন্য নানা ধরনের কল্পকাহিনীর জন্ম দেন। আশ্রয় নেন শিবের যুক্ত করেন দেবতাকে শিবের সাথে। দেবীগণকে যুক্ত করা হয় শিবের স্ত্রী উমা, গৌরী ও পার্বতীর সাথে। কোনো কোনো
দেবতাকে শিবপুত্র কার্তিক ও গণেশের সাথে যুক্ত করা হয়। লক্ষণীয় ব্রাহ্মণ্য সমাজ লোকায়ত দেব-দেবীকে আর্যদের দেবতা ইন্দ্র, অরুণ, বরুণ, ব্রহ্মা অথবা বিষ্ণুর সাথে যুক্ত করার সাহস পায়নি। কারণ এই আর্য দেবতাদেরসাথে লোকায়ত দেব-দেবীর কোনো সম্পর্ক নেই। তন্ত্র, তান্ত্রিক মত, মাতৃপূজা, পরলোকে বিশ্বাস, মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃষির সাথে সম্পর্কিত নানা বিশ্বাস ইত্যাদি আর্য- সংস্কৃতির বিষয় নয়। মনসা, শীতলা, চন্ডী, পাঁচু ঠাকুর, কালু রায়, রাজভলবী, হাড়িঝি, দেবী উত্তরবাহিনী,
রংকিনী ও দক্ষিণ রায় থেকে শুরু করে বহু লোকায়ত দেব- দেবী আছে যাঁরা এর সাক্ষ্য। এসব দেব-দেবীকে শিবের আশ্রয়ে আনার আরও একটি কারণ লক্ষণীয়। মধ্যযুগ থেকে শুরু করে ব্রিটিশযুগ পর্যন্তদৈব সংগ্রামের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। এই দিকটি হচ্ছে যুক্ত বা মিলিত সাধনার প্রচেষ্টা। বিভিন্ন সম্প্রদায় ও মুসলমানদের মধ্যে দেবতার আরাধনায় নৈকট্য আনার জন্য সমাজ একটি চেষ্টা চালায়। এই ঐক্য সাধনায় ধর্মঠাকুর, সত্যনারায়ণ ও সত্যপীর একটি ভূমিকা পালন
করে। দেখা যায়, লোকায়াত দেব-দেবীর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছেন ধর্মঠাকুর। পরবর্তীকালে ‘ধর্মঠাকুর’ ও ‘সত্যদেব’ বিবর্তনের মাধ্যমে ‘সত্যনারায়ণে’ রূপান্তরিত হন। পরিশেষে লোকায়ত দেব-দেবী সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলা দরকার।
প্রথমত দেখা যায় লোকায়ত দেব-দেবীগণ ধীরে ধীরে বিবর্তিত হচ্ছে। অনেক লোকায়ত দেব-দেবী তিরোহিত হচ্ছে। অনেক লোকায়ত দেব-দেবী আবার নিজেদের মধ্যে জায়গা বদল করে নিচ্ছে, মিশে যাচ্ছে অ-লোকায়ত দেব-দেবীর সাথে। গড়ে উঠছে হিন্দুর বৃহত্তর পূজা ঐতিহ্য ও সাধনার নতুন নতুন মাধ্যম। সমাজ বদলের সাথে সাথে ব্র্রহ্মণ্য সমাজও ধীরে ধীরে এঁদের গ্রহণ করে
নিতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু এ ফাঁকে ব্রাহ্মণ মন্দির নিয়েছে দখল করে। মন্দিরে মন্দিরে দেব-দেবী পূজার অধিকার এখন একমাত্র তার। বাকি হিন্দুরা দেবদেবীকে ডাকেন ব্রাহ্মণের মাধ্যমে। যেন ঈশ্বরকে ডাকার সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নেই। দ্বিতীয়ত দেখা যাচ্ছে দেব-দেবীর এই গ্রহণ-বর্জন প্রক্রিয়ার মধ্যেই লুক্কায়িত আছে হিন্দু সমাজের পরিবর্তন প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার যেন কোনো শেষ নেই। এতে অনেক সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর হাসি-কান্না, দুঃখ ও অভিমান লুকিয়ে আছে। পাশাপাশিলুক্কায়িত আছে হিন্দুদের সামাজিক ইতিহাসও।


এই বিভাগের আরো খবর

Archive Calendar

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১