দৈনিক নতুন বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে, যা বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সে কথাই অভিন্ন কণ্ঠে জানালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার যৌথভাবে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করে উভয় দেশের সরকারপ্রধানই দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে আমাদের যৌথ সহযোগিতার দৃষ্টান্তস্বরূপ আরও এমন অনেক সাফল্যের উদাহরণ তৈরি হবে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও অনেক অনন্য মাইলফলক রচিত হবে আগামী দিনে। গত ৯ বছরে উভয় দেশ যে কাজ করেছে, তা আগের কয়েক দশকেও হয়নি। এটি দুই দেশের বিরল বন্ধুত্বপূর্ণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্কেরই প্রমাণ করে। এতে উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলেই দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী।
সাফল্যের আরও উদাহরণ তৈরি হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশ সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় মন্তব্য করে বলেছেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়, আমরা এটা প্রমাণ করেছি। আমি মনে করি এটা একটা দৃষ্টান্ত, বিশ্বে এটি নজির স্থাপন করেছে। আমরা যৌথভাবে (বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী) তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। এটি দুই দেশের বিরল বন্ধুত্বপূর্ণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রমাণ করে। এতে উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। আমি আশাবাদী সামনের দিনগুলোতে আমাদের যৌথ সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্বরূপ আরও এমন অনেক সাফল্যের উদাহারণ তৈরি হবে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।
বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভারতের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের যৌথ উদ্বোধনকালে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং নয়াদিল্লি থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন। তারা ঢাকা ও নয়াদিল্লি থেকে যৌথভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোতাম টিপে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আজকে যে তিনটি প্রকল্প আমরা উদ্বোধন করেছি তা উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সহযোগিতার দৃষ্টান্তস্বরূপ আরও অনেক সাফল্যের উদাহরণ তৈরি হবে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। তিনটি প্রকল্প হচ্ছে- আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ এবং মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের দ্বিতীয় ইউনিট।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ভাষা দ্বারা আবদ্ধ। আমাদের দুই দেশই ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রসহ অগণিত বিষয়ে অভিন্ন মূল্যবোধ পোষণ করে। আজ (বুধবার) তিনটি ভারত-সহায়ক উন্নয়ন প্রকল্পের যৌথ উদ্বোধন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনন্য সাধারণ বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রমাণ দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন। আমি সত্যিই খুব খুশি। তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অবদান রাখবে। এ ছাড়া দেশে মেট্টোরেল পরিষেবা চালু করেছি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বন্ধবন্ধু টানেল হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। বিগত বছরগুলোতে আমরা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি। যার মধ্যে রয়েছে-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সহজীকরণসহ আরও অনেক কিছু। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে আমাদের অর্জন দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে তার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সে সময় তার সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ছিল বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। এই দুটি খাতে বাংলাদেশের অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য তিনি ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে তাকে আমন্ত্রণ জানানো এবং উষ্ণ আতিথেয়তা প্রদর্শনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের জনগণ ও তার তরফ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ় করতে আপনার আন্তরিকতার জন্যও আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘মুজিব একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রটি যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণের জন্য ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। চলচ্চিত্রটি বর্তমানে ভারতসহ বাংলাদেশের সকল প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে। নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সকল কলা-কুশলীসহ সকলকেও তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আত্মত্যাগের কথা জানতে পারবে।
সরকার প্রধান বলেন, আজকে যে তিনটি প্রকল্প আমরা উদ্বোধন করেছি তা উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। এই প্রকল্পগুলো আঞ্চলিক যোগাযোগের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টটি আরও সাশ্রয়ী মূল্যে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ অবদান রাখবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে অন্যান্য ব্যয়বহুল উৎসের ওপর থেকে আমাদের নির্ভরতাকে কমিয়ে নিয়ে আসবে। পাশাপাশি সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়তা করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ আমাদের দু’দেশের জনগণের মধ্যে বিশেষ করে ভারতের উত্তর পূর্ব অংশের সঙ্গে সংযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ প্রকল্পটি মোংলা বন্দরকে বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সারাসরি যুক্ত করবে। এতে করে আমাদানিকৃত কন্টেনারগুলো সহজেই রেলের সাহায্যে দেশের উত্তরপূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন সম্ভব হবে।
আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ভারতের জনগণ যাতে ব্যবহার করতে পারে সেজন্য তার সরকার উন্মুক্ত করে দিয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিগত প্রায় ১৫ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। দেশের চরম দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালে থাকা ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে তার সরকার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে ২ হাজার ৭শ’ ৬৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছে।
বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের স্বপ্ন ও লক্ষ্যের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেজন্যই তার সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। গতবছর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সেতু আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, রাজধানীতে মেট্রোরেল পরিষেবা চালু, ঢাকায় প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং এই অক্টোবর মাসে পদ্মা সেতু রেল পরিষেবারও উদ্বোধন করা হয়েছে। মাত্র ক’দিন আগে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেছি। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দু’দেশের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক বাস্তব ফলাফল অর্জন করেছি। যার মধ্যে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য রাজ্যসমূহের সঙ্গে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সংযোগ সহজীকরণ প্রভৃতি। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরজীবী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে আসন্ন দীপাবলী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারতের জনগণকে তার অগ্র্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার আখাউড়া-আগরতলা ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন এবং ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার ত্রিপুরায় ৩৯২ দশমিক ৫২ কোটি টাকা ভারতের অনুদান সহায়তায় বাস্তবায়িত হয়েছে। সোমবার এই রুটে ট্রায়াল রান হয়েছিল, যেখানে বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত একটি পণ্যবাহী ট্রেন চলে। অন্যদিকে যাত্রীবাহী ট্রেনের ট্রায়াল রান শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
এছাড়া খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্পটি ভারতের রেয়াতি লাইন অব ক্রেডিট দিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। যার মোট প্রকল্প ব্যয় ৩৮৮ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ডলার (ভারতীয় এলওসি থেকে ৬৯ দশমিক ১৮ শতাংশ অর্থায়ন)। প্রায় ৬৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার রেললাইনের নির্মাণ কাজ ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন হয়েছে, যা মোংলা বন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সংযোগের সূচনা করবে। রেল সংযোগ চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর মোংলা ব্রডগেজ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট ভারতীয় কনসেশনাল ফিন্যান্সিং স্কিম লোনের অধীনে নির্মাণ হচ্ছে।
প্লান্টটি বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে। মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের ১ম ইউনিট ও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে উদ্বোধন করেন এবং বুধবার ইউনিট-২ উদ্বোধন করা হলো।
বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার মোদির ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমাগত নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে মন্তব্য করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকি গত ৯ বছরে উভয় দেশ একসঙ্গে যে কাজ করেছে, তা আগের কয়েক দশকেও হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার ভারতের অর্থায়নে বাস্তবায়িত তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের যৌথভাবে উদ্বোধনের সময় এমন মন্তব্য করেন মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। পরে দুই দেশের সরকারপ্রধান প্রকল্প তিনটির উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, আমরা আবার ভারত-বাংলাদেশ পারস্পরিক সহযোগিতা উদযাপন করতে একত্রিত হয়েছি। আমাদের সম্পর্ক আপাত দৃষ্টিতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ হবে জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে ভারতের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আমরা গর্বিত এ কারণে যে, বাংলাদেশ আমাদের বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, ‘এটা আনন্দের বিষয় যে আমরা আবারও ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার সাফল্য উদযাপন করতে সংযুক্ত হয়েছি। আমাদের সম্পর্ক ক্রমাগত নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। গত ৯ বছরে আমরা একসঙ্গে যে কাজ করেছি, তা আগের কয়েক দশকেও করা হয়নি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সীমান্তে শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এটি কয়েক দশক ধরে ঝুলে ছিল। আমরা সমুদ্রসীমার বিরোধও সমাধান করেছি। গত ৯ বছরে ৩টি নতুন বাস পরিষেবা চালুর মাধ্যমে ঢাকা, শিলং, আগরতলা, গুয়াহাটি এবং কলকাতার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, গত ৯ বছরে ৩টি নতুন ট্রেন পরিষেবাও শুরু হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে পার্সেল এবং কন্টেনার ট্রেনগুলোও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলছে। গঙ্গা বিলাস নামে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী চালু করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পর্যটনও চাঙ্গা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ৯ বছরে আমাদের (বাংলাদেশ ও ভারতের) অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য তিনগুণ বেড়েছে। আজ আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগের উদ্বোধন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে প্রথম রেল সংযোগ।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলোর সময় থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার দৃঢ় বন্ধন রয়েছে। আমি আনন্দিত যে, আমরা মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটও উদ্বোধন করেছি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে যে তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন তাদের মধ্যে রয়েছে- আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগ, খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন এবং মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের দ্বিতীয় ইউনিট।
নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, ‘আমরা যে ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ (সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সবার উন্নয়ন) নীতিতে বিশ্বাস করি, এটি আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের জন্যও বিবেচনা করি। আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে গর্বিত। গত ৯ বছরে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অর্জনের তালিকা অনেক দীর্ঘ। আজ যে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে আমরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আজ সেগুলো উদ্বোধন করার সুযোগও পেয়েছি। আমাদের যৌথ প্রচেষ্টার সাফল্যের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।