দৈনিক নতুন বাংলা প্রতিবেদন : টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছেড়েছিলেন অভিমানে। এবার চোখের জলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই বিদায় বলেছেন বাংলাদেশের ড্যাশিং হার্ড হিটার ওপেনার ও ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছিলেন ১৩ রান। ১৭ রানের হারের ম্যাচটিই তামিমের হয়ে থাকল বাংলাদেশের জার্সিতে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
চট্টগ্রামের একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক বিদায়ের ঘোষণা দেন তামিম। বিদায়ের কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে ধরে আসে তামিমের গলা। মাথা নিচু করে চোখের জল মুছতে দেখা যায় তাকে।
কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তামিম? প্রশ্ন উঠছে জোরেসোরে। তবে তামিম জানিয়েছেন এমন সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।’
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করেছেন তামিম। গত ডিসেম্বরে ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে পারেননি ওয়ানডে সিরিজ। পিঠের পুরোনো চোটের কারণে খেলতে পারেননি আফগানদের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টও। একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের আগে তিনি নিজেকে শতভাগ ফিট নয় বলে দাবি করেও ম্যাচ খেলেছিলেন। যা নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বেশ কড়া ভাষায় কথা বলেন তামিমকে নিয়ে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব সমালোচনার জবাবটা তামিম দিলেন বিদায় নামক কঠিন একটা শব্দ দিয়ে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের যাত্রা ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেনিয়ার বিরুদ্ধে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ঝড় তুলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ক্রমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান হিসেবে। বাংলাদেশের ব্যাটিং রেকর্ডের অনেকগুলোই নিজের করে নেন তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক ‘প্রথম’ কিছুর জনক এই তামিম।
৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে রান ৫ হাজার ১৩৪ রান তামিমের। সেঞ্চুরি ১০টি, ফিফটি ৩১টি। টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি তার। ২৪১ ওয়ানডে ম্যাচে ৩৬.৬২ গড়ে ৮ হাজার ৩১৩ রান তামিমের। ১৪ সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৫৬টি ফিফটি। এই সংস্করণে দেশের হয়ে রান, সেঞ্চুরি, ফিফটি, সবকিছুতেই তিনি সবার ওপরে।
৭৪ ম্যাচে ১ হাজার ৭০১ রান নিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলেছেন গত জুলাইয়েই। এই সংস্করণে দেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানও তিনি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজার রান করা দেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরি ২৫টি। বাংলাদেশের হয়ে ২০ সেঞ্চুরিও নেই আর কারও। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে নিয়মিত অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের হয়ে প্রথম অধিনায়কত্বের স্বাদ পান তামিম। ২০১৯ বিশ্বকাপের পরপর শ্রীলঙ্কা সফরে তিন ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেন তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজার চোটে পড়ায়। ২০২০ সালে মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়কের দায়িত্বও পান তিনিই।
সব মিলিয়ে ৩৭টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। জয় পেয়েছেন ২১টিতে। অন্তত ৫টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সাফল্যের শতকরা হারে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তিনিই।
তামিমের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে একটাই আফসোস বিশ্বকাপ। চারটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচে নেই তার সেঞ্চুরি। চারটি ফিফটিতে ৭১৮ রান করেছেন ২৪.৭৫ গড়ে। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৯ রান তাড়ায় ৯৫ রানের ইনিংসটিই বিশ্বকাপে তার ক্যারিয়ার সেরা।
আর কয়েক মাস পরেই ভারতে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বৈশ্বিক আসরে আক্ষেপ ঘোচানোর হাতছানি ছিল তামিমের। তবে হঠাত এক ঝড়ে সব থমকে দিলেন তামিম। শেষ হলো বাংলাদেশের ক্রিকেটে উজ্জ্বল এক ক্রিকেটারের যাত্রা।